চৌধুরী বাড়ির ছেলের সাথে বিরাট সম্বন্ধ দেখে তুলির বিয়ে হয়ে গেল মহা ধুমধামে। চৌধুরী গিন্নি তুলির মায়ের ছোটবেলার পরানের সই। তিনি সইকে কথা দিয়েছেন তুলির পড়া নিয়ে যেনো কোন দুশ্চিন্তাই না করেন। তুলির বয়স ষোল হতে তখনও তিন মাস বাকী ছিল। একজন হেডমাস্টারের মেয়ের বিয়ে ১৮ বছরের নিচে ভাবাই যায় না, যেখানে হেডমাস্টার সাহেব নিজেই বাল্যবিবাহের বিপক্ষে বিভিন্ন সভাতে আপোষহীন বক্তব্য রেখে তুমুল করতালি পান। কিন্তু কী করবেন তিনি? মেয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে বখাটেদের উৎপাতে থানায় জানিয়েও কোন সুরাহা করতে পারেননি। টুটুল যে কয়দিন গ্রামে ছিল, তখন সেই তুলিকে স্কুলে দিয়ে আসতো। কিন্তু শহরে পড়তে আসা টুটুলের পক্ষে সম্ভব ছিল না নিজের পড়াশোনা রেখে বোনকে সুরক্ষা দিতে। বাল্যবিবাহের বিপক্ষে অনেক কিছু হচ্ছে কিন্তু সমাজের মানুষগুলো সচেতন না হলে, শ্বাপদ সংকুল পরিবেশে মেয়েগুলোকে সুষ্ঠভাবে সুরক্ষা দিতে না পারলে আইন এসি রুমেই ঘুমাবে তা কেউ বুঝতে চায়না। বাল্যবিবাহ আইনের নিকুচি করে মেয়েকে সুরক্ষিত রাখতে বিয়েটাই তখন একমাত্র সমাধান হয়ে উঠে। ভরসা, বড়লোক শ্বশুর মেয়েকে নিশ্চয়ই পড়াবেন।
চৌধুরী গিন্নি কথা রেখেছিলেন। চৌধুরী সাহেব বৌকে এলাকার বড় স্কুলে ক্লাস করার ব্যবস্থা করে দিলেন। নতুন বৌকে স্কুলে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব কিছুদিন পতি দেবতাই পালন করলেন। কিন্তু চৌধুরী পুত্রের ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে আসার সাথে সাথে তুলির স্কুলে যাওয়ার মেয়াদও কমতে লাগলো। এসএসসি পরীক্ষার আগেই চৌধুরী পুত্র পিএইচডি করতে দেশ ছাড়লো। চৌধুরী সাহেবের ব্যস্ততায় উনার পক্ষে সম্ভব না পুত্রবধুকে স্কুলে আনা নেয়া করা। তুলি সাহস করে শাশুড়িমাকে প্রস্তাব করলো একাই স্কুলে যাওয়ার। কাঁইকুঁই করে তিনি শেষ পর্যন্ত মত দিলেন।
ষোড়শী, যৌবনা, কমনীয়তায় ভরপুর তুলি কীভাবে পুরুষ নামক শ্বাপদদের চোখ ফাঁকি দিবে?
স্কুলে যাতায়াতের পথে রিক্সার পথরোধ করে দাড়ানো শ্বাপদদের কেউ খুঁজতে যায়নি বরং স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল তুলির।
বাসায় পড়েই শেষতক পরীক্ষার আগে গিয়ে বাপের বাড়ি থেকে পরীক্ষা দিল তুলি। যেই মেয়ের বাপের বাড়ির কাজিনদের মধ্যে স্কুলের ফলাফল সবথেকে ভালো ছিল, যাকে গলায় ঝোলানো স্টেথেস্কোপ আর সাদা এপ্রোন গায়ে ভাবতেই ওর নিকটাত্মীয়দের ভালো লাগতো সেই তুলি অল্পের জন্যে জিপিএ ৫ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হলো।
চৌধুরী সাহেবের শখ হয়েছে পুত্রবধুকে ব্যারিস্টার বানাবেন। তাই কলেজে বিজ্ঞান বিভাগ পড়া জরুরী না বলে মানবিক বিভাগে ভর্তি করিয়ে দেয়া হলো যেখানে প্রতিদিন কলেজে না গেলেও চলে। এদিকে চৌধুরী গিন্নি পুত্রবধুর হাতে সংসার বুঝিয়ে দিয়েছেন। সারাবছর দশমিকের পরের তিন ঘর সম্বন্ধীয় আত্মীয়রা ভরে থাকে চৌধুরী বাড়ি। প্রবাসী বরকে কাছে না পেলেও শ্বশুর বাড়ির চৌদ্দগুষ্ঠির সেবাযত্ন, রান্নাবান্না সামলাতে সামলাতেই তুলির দম ফেলার সময় পায় না, সে পড়বে কখন?
যেবার চৌধুরী পুত্র মাসখানেকের জন্যে দেশে এলেন তখন শাশুড়ির একাকীত্বে "নাতি চাই" বায়নায় মা অন্তপ্রাণ চৌধুরী পুত্র মায়ের কথা ফেলতে পারেনি।
আঠারতে পা দেবার আগেই তুলি কন্যা সন্তানের মা হলো। এই যুগেও কন্যা সন্তান পেটে ধরার দায় তুলি হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া শুরু করলো। চৌধুরী পুত্র যে কয়দিন দেশে ছিল ততদিন পান থেকে চুন খসলেই প্রয়োজনে গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করেনি।
বাপের বাড়ি যাওয়ার কথা মুখে নেবার সময় যেমন নেই, সাহস বা সুযোগও তেমন নেই তুলির । বাচ্চা আর সংসার সামাল দিতে গিয়ে নিজের দিকে তাকানোর সময় নেই। দিনকে দিন কালশিটে হয়ে যাচ্ছে চেহারা।
বাড়ি ভরা মানুষের জন্যে তের পদের ব্যঞ্জনের খাবার পরিবেশনের পর অনেক সময় নিজের জন্যে এক মুঠো ভাতও সেভাবে অবশিষ্ট থাকেনা। আবার রান্না করতে গেলে নিজেরই হেঁসেলে ঢুকতে হবে ভয়ে ক্লান্তিতে নুয়ে পড়ে আধপেটেই দিন পার করে দিতে হয় তুলির।
টুটুল সেবার বোনকে দেখতে এলে তুলি ভাইকে প্রশ্নের জবাবে বলেছিল-
হাসতে হাসতে যেই শ্লোক একদিন বোন তুলিকে শুনিয়েছিল, আজ তুলির শ্বশুর বাড়িতে এসে তুলির কাছ থেকে তাই শুনে টুটুলের মুখটা আমসি হয়ে গেল। তবে কি বোন ভালো নেই এখানে?
ভাইকে বিদেয় করে তুলি জানালার শিকে হাত রেখে নীরবে চোখের পানি ফেলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিড়বিড় করে বলে, নিজের সন্তানকেও কেন তুমি আগলে রাখতে পারলে না, মা? আমি মেয়ে তাই?
শিকে ধরা হাতটা ক্রমশ শক্ত হয়ে উঠে তুলির। নিজের কন্যা সন্তানের জন্যে হলেও তুলিকে শক্ত হতে হবে, হতে হবে সচেতন মা। যেনো নিজের সন্তানের মুখোমুখি কাঠগড়ায় না দাঁড়াতে হয় তুলিকে ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।